‘বর্তমান অবস্থায় দেশ পরিচালনা কঠিন’
ইনকিলাব ডেস্ক : বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, বর্তমান অবস্থায় দেশ পরিচালনা কঠিন। তবে তার দাবি, পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। অন্যদিকে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা বলেছেন, সংলাপের মাধ্যমে সংকট সমাধানের উদ্যোগ না নিলে দেশে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি হতে পারে। গতকাল ঢাকায় বিয়াম মিলনায়তনে সংলাপের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ, ঢাকা সফরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর তিস্তা ইস্যুতে দেয়া বক্তব্য এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সম্ভাবনার বিষয়গুলো আলোচনায় উঠে আসে।
সংলাপের এ পর্বে আলোচক ছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস।
বাংলাদেশ সংলাপে একজন দর্শকের প্রশ্ন ছিল চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক উদ্যোগ এর আগে কার্যকরি না হলেও আর কোনো বিকল্প কি রয়েছে? আরেকজন দর্শক জানতে চান সংকটের রাজনৈতিক সমাধান না করে সরকারের পক্ষে কি সুষ্ঠুভাবে আগামী চার বছর দেশ পরিচালনা সম্ভব? জবাবে মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, যারা রাজনীতির বদলে সহিংসতা করছে তাদের সাথে সংলাপ হতে পারে না। আর বিদেশিদের চাপের কাছেও নতি স্বীকারের কিছু নেই। তবে সরকার সংলাপের বিরোধী নয় এবং সময়মত সে সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। বিএনপি জোট যদি হরতাল অবরোধ তুলে নেয় তাহলে শান্তি ফিরে আসবে এবং আলোচনার অবস্থা তৈরি হবে’।
বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান বলেন, সংলাপের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগকে সরকারের ইতিবাচক ভাবে নেয়া উচিত। কারণ দেশ এখন চরম বিপর্যয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, সহিংসতার জন্য বিএনপি দায়ী নয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সংলাপই হতে পারে সংকট সমাধানের একমাত্র পথ।
জনাব রহমান বলেন, ‘পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হচ্ছে। মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় একমাসও কঠিন। অনেকে পেট্রোলবোমা নিয়ে ধরা পড়েছে, কিন্তু তাদের ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় চার বছর কি করে টেনে নিয়ে যাবে। গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে’।
আলোচনায় অংশ নিয়ে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আলোচনা যে কোনো পর্যায় থেকেই শুরু হতে পারে। একই সাথে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য গণতান্ত্রিক বক্তব্য দেয়া উচিত সব পক্ষকেই। তিনি বলেন, ‘যে ধরনের বক্তব্য দেয়া হচ্ছে সেগুলো সীমিত করা দরকার। গণতান্ত্রিক বক্তব্য হলে একটা পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে পারে’।
আন্তর্জাতিক চাপে কাজ না হলে বিকল্প আর কি হবে সংকট সমাধানের জন্য?-এমন প্রশ্নের জবাবে সাবেক রাষ্ট্রদূত নাসিম ফেরদৌস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সুযোগ সীমাবদ্ধ। অবরোধ দিতে পারে। হয়তো বলতে পারে, সহিংসতা বন্ধ না করলে এখান থেকে পণ্য নেবে না, জনশক্তি নেবে না, তাহলে রাজনীতি কার জন্য’। নাসিম ফেরদৌস বলেন, ‘যেভাবেই হোক দু’পক্ষের মধ্যে সংলাপ হতেই হবে এবং কার্যত এর আর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, উস্কানিমূলক বক্তব্য পরিহার করতে দলগুলোর এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য নির্দিষ্ট মুখপাত্র থাকা উচিত’।
আরেকজন দর্শক জানতে চান- তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তির ব্যাপারে তার ওপর আস্থা রাখতে অনুরোধ করেছেন মমতা ব্যানার্জি। এব্যাপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এই মুখ্যমন্ত্রীর ওপর কতটুকু আস্থা রাখা যায়? একজন দর্শক বলেন, তিনি ঢাকায় একটা কথা বলেছেন, কিন্তু দিল্লিতে গিয়ে মত বদল করতে পারেন। আরেকজন বলেন, মমতা বাংলাদেশের স্বার্থ দেখবেন তা হতে পারে না। তবে দর্শকদের মনে মমতা ব্যানার্জির বক্তব্য নিয়ে কিছুটা সংশয় থাকলেও বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের ফারুক খান অনেকটা অভিন্ন সুরেই বলেন, মমতা ব্যানার্জির অবস্থান ও বক্তব্যে তারা তিস্তার পানিবণ্টনসহ অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধানের বিষয়ে আশাবাদী। সূত্র : বিবিসি।


Comments